১৯৯৩ সালের গ্রীষ্ম। সাইবেরিয়ার আল্টাই পর্বতশ্রেণীর উকক (Ukok) মালভূমি।
রাশিয়া-চীন সীমান্তের কাছাকাছি তাঁবু ফেলেছেন একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। তাদের নেতৃত্বে সাইবেরিয়ার অন্যতম শহর নভোসিবির্স্কের (Novosibirsk) প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ববিদ্যা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ড. নাতালিয়া পোলোস্মাক। তন্ন তন্ন করে চারদিকে খোঁজ চালাচ্ছেন তারা পাজিরিক নামে প্রাচীন এক গোষ্ঠীর চিহ্ন খুঁজতে।
কিন্তু এখানেই কেন? কারণ স্থানীয় লোকগাঁথা দুর্দমনীয় এক যাযাবর গোত্রের কথা বলে। ড. নাতালিয়ার মতে- এরাই পাজিরিক, যাদের কথা সুবিখ্যাত গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডেটাস সেই পঞ্চম খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বলে গেছেন। মূলত, দুর্ধর্ষ স্কাইথিয়ানদের কিছু গোত্র মিলেই সৃষ্টি পাজিরিকদের। ষষ্ঠ থেকে তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ অবধি ইউরেশিয়ান স্তেপে (বিস্তীর্ণ তৃণভূমি) দোর্দণ্ডপ্রতাপে বিচরণ করত এই যাযাবরেরা। আল্টাই পর্বতশ্রেণী পড়েছে ইউরেশিয়ান স্তেপের এলাকাতেই। এখানেও নাকি আনাগোনা ছিল পাজিরিকদের।
তুষারকুমারীর সন্ধান
ড. নাতালিয়া যে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন, সেখানে পাজিরিকদের কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। তার লক্ষ্য বড় কোনো আবিষ্কার। মূলত পাজিরিক কোনো সমাধি চিহ্নিত করাই তার ইচ্ছে। স্থানীয় লোকেরা মাটির ঢিপিতৈরি করে তাদের মৃতদের কবরস্থ করার প্রথা পালন করে বহুকাল থেকেই। সেরকম একটি ঢিপি খুঁজে পেলেই কেল্লাফতে।
বিধাতা মুখ তুলে তাকালেন তার দিকে। সীমান্তরক্ষীদের কমান্ডার একদিন সকালে এলেন গবেষকদের সাথে দেখা করতে। আশেপাশের এলাকা তার নখদপর্ণে। ড. নাতালিয়ার চাহিদা শুনে তিনি তাদের নিয়ে গেলেন চীন সীমান্তের সাথে নো-ম্যান্স-ল্যান্ড যেখানে শুরু হয়েছে, তার কয়েক মিটারের মধ্যে। এখানে ছিল কয়েকটি কুর্গান (kurgans)। স্থানীয়দের মধ্যে গুজব আছে- এখানে সুপ্রাচীন এক জাতির সমাধি রয়েছে।
কুর্গান হলো স্থানীয়দের কবর দেয়ার একটি কৌশল। গাছের গুঁড়ি দিয়ে তারা ঘরের মতো বানাত, তারপর সেখানে মাটি দিত মৃতদের। কাজ শেষ হলে ঘরের চারদিক ঢেকে দেয়া হতো মাটি আর পাথরে, তৈরি হতো উঁচু ঢিপি। কমান্ডারের দেখানো ঢিপি দেখে ড. নাতালিয়া বুঝতে পারলেন- ঠিক এরকম কিছুই খুঁজছিলেন তারা।
প্রত্নতাত্ত্বিক দল খুঁড়তে খুঁড়তে দুই মিটার গভীরে চলে গেল। সেখানে দেখতে পেল কাঠের এক প্রকোষ্ঠ। তার গায়ে বৃত্তাকারে সাজানো পাথরের চিহ্ন। প্রচণ্ড কৌতূহল নিয়ে প্রকোষ্ঠ খুলে ফেললেন ড. নাতালিয়া। কী আশ্চর্য, ভেতরে জমাট বরফ! এমন সমাধি সাইবেরিয়াতে পাওয়া গেছে হাতেগোণা, তা-ও কয়েক দশক আগে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা গরম পানি ঢেলে বরফ গলাতে হাত দিলেন। প্রথমেই তাদের দৃষ্টিগোচর হলো লাগাম আর রেকাব পরানো ছয়টি ঘোড়ার দেহ। এরপর বেরিয়ে এলো প্রায় অক্ষত একটি কাঠের টেবিল, এর উপর সাজিয়ে রাখা ঘোড়া আর ভেড়ার মাংসের থালা। কটু গন্ধ বুঝিয়ে দিচ্ছিল- মাংস পচে গেছে, তবে তাছাড়া প্রায় অক্ষত সব।
উৎসাহিত ড. নাতালিয়া অনেক কষ্টে বাকি বরফও গলিয়ে ফেললেন। তাদের সামনে এবার উন্মোচিত হলো কাঠের কফিন। ডালা খুলে সবাই চমকে গেল। ভেতরে একপাশে মুখ ফিরিয়ে শুইয়ে রাখা এক তরুণীর মমি, যেন দীর্ঘ একদিন শেষে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।
নাতালিয়ার দলের প্রত্যেকেরই মনে হচ্ছিল- এই সেদিনই মারা গেছে মেয়েটি। হলদেটে চামড়ার আভা এখনও মিলিয়ে যায়নি। বাম হাত আর কাঁধে জ্বলজ্বল করছে বেশ কয়েকটি নীলাভ ট্যাটু। তাকে সমাহিতকরা হয়েছে সিল্কের শার্ট আর লাল-সাদা উলের স্কার্ট পরিয়ে। এখনও কাপড়ের সুতা আর রঙ অটুট।
ড. নাতালিয়া বুঝতে পারলেন- যুগান্তকারীআবিষ্কারের দোরগোড়ায় তিনি। খুব সাবধানে সব তদারকি করা হলো। তবে তারপরেও ক্ষতি একেবারে এড়ানো গেল না। গরম পানি ব্যবহারের ফলে মৃতদেহের কিছু ট্যাটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একটি দুর্ঘটনা
ড. নাতালিয়া তরুণীর মমিটি নিয়ে চলে গেলেন নভোসিবির্স্কের অন্তর্গত আকাদেমগরোদোকে (Akademgorodok)। এখানে আছে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। কিন্তু এখানে ঘটে গেল এক দুর্ঘটনা। মমি ফ্রিজারে রাখার সময় দুর্ভাগ্যবশত ভুল ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়। এই ফ্রিজারে আগে পনির সংরক্ষিত ছিল।
দ্রুতই গবেষকরা দেখতে পেলেন যে মৃতদেহের গায়ে জন্ম নিয়েছে ছত্রাক। ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা গায়ে, খেতে থাকে ঠাণ্ডায় জমে থাকা নরমাংস। এর প্রতিকারের উপায় আকাদেমগরোদোকে নেই, সুতরাং মমি নিয়ে উড়াল দিতে হলো রাজধানী মস্কোতে। সেখানে প্রায় এক বছর চেষ্টার পর মমিটি অনেকটাই পূর্বাবস্থায় ফেরত নিতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। এরপর তা নভোসিবির্স্কে ফিরিয়ে এনে গবেষণা শুরু হলো।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ
ড. নাতালিয়া যখন সদ্য আবিষ্কৃত তরুণীর পরিচয় উদ্ধারে ব্যস্ত, তখন আল্টাই এলাকায় চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। ইংরেজি ভাষাভাষী পত্রিকা তরুণীকে 'তুষারকুমারী' বা 'সাইবেরিয়ান আইস মেইডেন' বলে ডাকলেও স্থানীয় মানুষের ধারণা- সে উকক মালভূমির রাজকন্যা (Princess of Ukok Plateau)।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা গল্প বলে- দুষ্ট দেবতাদের থেকে আল্টাই আর তার বাসিন্দাদের রক্ষাকর্তা এই নারী। তাকে সরিয়ে নিলে সেই রক্ষাকবচ ভেঙে পড়বে। তদুপরি, যেখান থেকে ড. নাতালিয়া মমি উদ্ধার করেছেন, সেই জায়গা স্থানীয়দের পবিত্র ভূমি বলে স্বীকৃত। পবিত্র স্থানের অমর্যাদা এবং রাজকন্যাকে নিয়ে টানাহেচড়া করায় আল্টাইয়ের লোকেরা বেশ ক্ষেপে গেল। দাবি করল- অবিলম্বে মমি ফিরিয়ে আনা হোক। চলতে থাকল আল্টাইয়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নভোসিবির্স্কের বাকবিতন্ডা।
মমি নিয়ে গবেষণা
ওদিকে গবেষকেরা থেমে নেই। তারা চেষ্টা করছেন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। প্রথম জিজ্ঞাসাই ছিল- কীভাবে জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল এই মমি? ড. নাতালিয়া অনুমান করেছিলেন- হাজার বছর আগে, যখন মেয়েটিকে কবরস্থ করা হয়, তার কিছুকাল পরে কোনোভাবে ভূগর্ভস্থ পানি ঢুকে পড়ে তার কফিন ও আশপাশের ফাঁকা অংশে। সাইবেরিয়ার তীব্র ঠাণ্ডায় এরপর জমাট বেধে যায় সেই পানি। এর বহুদিন পর ড. নাতালিয়ার দল কবর খুললে বেরিয়ে আসে প্রায় অবিকৃত এক সমাধি।
অনেকটা সংরক্ষিত অবস্থায় থাকার ফলে বিজ্ঞানীরা মমিটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের সুযোগ পান। তারা হিসেব করে দেখলেন- মমিটি প্রায় ২,৫০০ বছরের পুরনো, এবং মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল আনুমানিক ২৫ বছর। তারা মেয়েটি কতটুকু লম্বা ছিল তারও একটি ধারণা দেন। তাদের মতে, ১৬৭ সেন্টিমিটার বা প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা ছিল এই নারী।
গবেষকদের চোখে আরো ধরা পড়ল যে, মমিকৃত তরুণীর মাথা মোড়ানো হয়েছিল তার জীবদ্দশাতেই। খালি মাথা ঢাকার জন্য তাকে পরিয়ে দেয়া হয়েছিল পরচুলা আর উঁচু একটি টুপি। এই টুপি আর পরচুলা মিলে তার মাথার দৈর্ঘ্য হয়েছিল প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার বা ৩ ফুট। কফিন তাই বানানো হয়েছিল বড় করে, যাতে পুরোটা ভেতরে ঢোকানো যায়।
তার সিল্কের পোশাক পরীক্ষা করেন সুইস গবেষকেরা। তারা মন্তব্য করেন, সম্ভবত এই কাপড়ের উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে। ফলে সেই আমলে ভারতের সাথে আল্টাইয়ের বাণিজ্যিক যোগাযোগের তত্ত্ব জোরালো হয়।
বিজ্ঞানীদের জন্য আরেকটি কৌতূহলজাগানিয়া বিষয় ছিল মমির চামড়ায় ট্যাটু। বাম কাঁধের ট্যাটু সবচেয়ে স্পষ্ট ছিল। এই ট্যাটুতে ফুটিয়ে তোলা পৌরাণিক কোনো জন্তুর চিত্র, যা ফুলের আকৃতিতে পরিণত হয়েছিল। অনেকেই ট্যাটুর এই জন্তুকে গ্রিফিন বলে দাবি করেছেন, যা ঈগলের মাথা, পাখা এবং সিংহের শরীর সম্বলিত কিংবদন্তীর পশু। অন্যান্য ট্যাটুতে ভেড়া আর তুষারচিতার মতো পার্থিব জন্তুর ছবি ছিল।
পশুর ট্যাটু শরীরে থাকায় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মেয়েটির শরীরে স্কাইথিয়ান রক্ত বইছে বলে মনে করলেন। কারণ রাশিয়া, মধ্য এশিয়া বা ইউরোপে পাওয়া স্কাইথিয়ান বিভিন্ন চিত্রকর্মের সাথে এগুলোর বেশ মিল ছিল।
আরো পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হলেন যে, তরুণীকে কবর দেয়া হয়েছিল মৃত্যুর অন্তত তিন মাস পরে। এই সময় তার শরীর মমিতে পরিণত করা হয়, এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্ভবত তাকে অতিথি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা তার শরীরে এমন কিছু দাগ দেখতে পান যাতে মনে হয় মৃত্যুর পর তাকে কয়েকবারই চেয়ারে বসানো হয়। যখন কবর দেয়ার সময় হয়, তখন ছয়টি ঘোড়া সাজিয়ে উৎসর্গ করা হয়। এরপর সমাধিতে কফিনের সাথে স্থান হয় তাদের। ড. নাতালিয়া এরই চিহ্ন হিসেবে রেকাব, লাগাম আর দেহাবশেষ খুঁজে পান।
রাজকন্যা, না অন্য কেউ?
তবে গবেষকেরা আল্টাইবাসীর রাজকন্যার দাবি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করলেন। যদিও মমি এবং সমাধিস্থ করার প্রক্রিয়া তরুণীর বিশেষ মর্যাদার দিকে ইঙ্গিত করে, তবে তা রাজকন্যার সাথে খাপ খায় না। ২০১২ সালে 'এক্সপার্ট সাইবেরিয়া' ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে গবেষকদের একজন, ড. নাতালিয়ার স্বামী অধ্যাপক ভাশিশ্লাভ মলোডিন জানান, পাজিরিকদের সমাজ সম্পর্কে যা জানা যায়, তাতে মনে হয় মেয়েটি মধ্যবিত্ত কোনো শ্রেণীর সদস্য।
প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, পাজিরিক অভিজাত শ্রেণীর যেসব কবর আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলো যতটা জমকালোভাবে সাজানো, তুষারকুমারীর সমাধির সাথে তার তুলনাই চলে না। পাশাপাশি, গবেষকেরা এটাও দেখিয়েছেন যে- কাছাকাছি পাওয়া সমসাময়িক কবরগুলোর থেকে কিন্তু তুষারকুমারীর সমাধি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে তৈরি করা। এটা তৎকালে তাদের জন্যই করা হতো, যারা জীবনভর কুমারীত্ব ধরে রাখার শপথ নিয়েছে। এই থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করলেন- সম্ভবত পুরোহিত, গোত্রের ওঝা বা শামান জাতীয় কিছু হবেন এই নারী।
ওঝা বা শামানের পক্ষে মেলে আরো একটি প্রমাণ। মমি করা দেহ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, জীবিত থাকাকালে নিয়মিত তামা আর পারদের ধোঁয়া টেনে নিত এই তরুণী, খুব সম্ভবত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রীতি পালন করতে এমনটা করত। তবে পরিমাণে এতটা বেশি নয় যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
মৃত্যুর কারণ
মাত্র ২৫ বছর বয়সে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ-সবল একজন তরুণী তাহলে মারা গেল কীভাবে? গবেষকরা অনেক দিন এর উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন। তামা আর পারদের ধোঁয়া ক্ষতিকর, তবে মমি থেকে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যাতে মনে হয় এর ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রহস্যভেদে এগিয়ে এলেন ড. আন্দ্রে লেতিয়াগিন। রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের সাইবেরিয়ান শাখার এই বিজ্ঞানি তুষারকন্যার এমআরআই করেন। এমআরআইতে ডান স্তনে টিউমারের চিহ্ন পান ড. লেতিয়াগিন। প্রাপ্ত তথ্য থেকে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছান- স্তন ক্যান্সার ছিল তরুণীর মৃত্যুর কারণ।
ডঃ লেতিয়াগিন এমনকি কবে এই রোগ দেখা দিয়েছিল তারও একটি ধারণা দেন। সম্ভবত তরুণীর বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখনই আঘাত হেনেছিল ক্যান্সার। ধীরে ধীরে তাকে দুর্বল করে ফেলে এই মারণব্যাধি। এর প্রভাবেই বোধহয় মৃত্যুর কিছুকাল আগে ঘোড়া থেকে পড়ে যাবার চিহ্ন দেখা যায়, যার ফলে তার হাড় ভেঙে গিয়েছিল।
গবেষকরা ড. লেতিয়াগিনের মতামতকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, অধিকতর খননের পর তরুণীর সমাধিতে গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল। এটা নাকি জীবদ্দশায় তার ক্যান্সারের ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন সভ্যতায় ব্যথা উপশমে গাঁজার ভূমিকা অবশ্য নতুন নয়। ইউরেশিয়ান সভ্যতার উচ্চপদস্থ অনেক ব্যক্তিই একই কারণে গাঁজা ব্যবহার করতেন।
জাতিগত বিতর্ক
নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে তুষার কুমারীর উৎপত্তি নিয়ে খোদ রাশিয়াতেই তুমুল বিতর্ক আছে। রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে- আধুনিক কালের আল্টাইয়ের অধিবাসীদের সাথে তার অনেক পার্থক্য রয়েছে। বরং সাইবেরিয়ার আদিবাসী গোত্র সেলকূপ আর কেটদের সাথেই তার মিল বেশি। এই গোত্রের লোকেরা এখনও টিকে আছে সেখানে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণীর মুখাবয়ব তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে- ককেশিয়ান মুখমণ্ডলের সাথেই তার মিল, তবে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আল্টাইয়ের বর্তমান লোকদের মধ্যে আবার মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীই প্রধান। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা রাশিয়ার অন্য বিশেষজ্ঞদের কথা মানতে চান না। তাদের দাবি- তরুণী মঙ্গোলীয়, ককেশীয় নন।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এই বিতর্ক আসলে তরুণীর পাজিরিক গোষ্ঠীর কেউ হবার সম্ভাবনাই জোরদার করে। কারণ, তৎকালীন এসব যাযাবর গোত্র ছিল বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। পাজিরিকরাও ব্যতিক্রম নয়। কাজেই ককেশীয়, মঙ্গোলীয় ইত্যাদি জাতির সংমিশ্রণ ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
ঘরে ফেরা
প্রায় ১৯ বছর নভোসিবির্স্কে কঠিন পাহারায় রাখা ছিল মমিটি। ২০১২ সালে আল্টাইতে ফিরিয়ে আনা হলো তাকে। স্থানীয় ওঝারা তার কবরের জায়গায় পালন করেন পবিত্র আচার। এরপর আদিবাসী গোত্রপতি এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের একটি দল মমিটি নিয়ে যান আল্টাই প্রজাতন্ত্রের রাজধানী গর্নো আল্টাইস্কে (Gorno Altaisk)। এখানে প্রতিষ্ঠিত নতুন জাতীয় জাদুঘরে ঠাঁই হয় তার। একইসাথে সরকারি ঘোষণা জারি করে আল্টাইয়ের আদিবাসীদের পবিত্র এলাকায় নতুন যেকোনো খননের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো।
জাদুঘরের একটি ঘর আলাদা করে দেয়া হয়েছে পাজিরিকদের প্রাচীন এই ওঝার জন্যে। যে কফিনেতাকে পাওয়া গিয়েছিল, তারই একটি প্রতিরূপ তৈরি করে মমিটি সেখানে স্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের নির্দিষ্ট দিনেই কেবল খোলা হয় ঘরের তালা, উন্মুক্ত করা হয় তুষারকন্যাকে আগত দর্শনার্থীদের সামনে।
This is a Bengali language article about the 2500 years old mummy found in Siberia. The article describes the origin of the mummy and the related controversies. Necessary references are hyperlinked and also mentioned below.
References
- Thorne, S. (2002). Siberia Ice Maiden Guards Her Secrets
- The Ice Princess of Siberia
- Dasgupta, P. The Story Behind the Siberian Ice Maiden and Her Tattoos
- Manaev, G. (2021). The mystery of the Siberian Ice Maiden
Feature Image : jamesjchoi.com
Thanks for reading: সাইবেরিয়ার তুষার কুমারী: হারিয়ে যাওয়া এক সভ্যতার চিহ্ন, Sorry, my English is bad:)